কক্সবাজার, রোববার, ৫ মে ২০২৪

অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার: আজ থেকে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান

অনিবন্ধিত ও নবায়নবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হচ্ছে আজ রবিবার (২৮ মে)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া এই সময়সীমা শেষ হওয়ায় রবিবার ৮টা থেকে অভিযান শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া শনিবার স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক অনিবন্ধিত ও নবায়নবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘রবিবার সকালে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হবে। এরপর থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ না হবে, ততক্ষণ আমাদের অভিযান চলবে। এছাড়া এ অভিযানে জেল-জরিমানাও করা হবে। ঢাকায় আজ থেকে চলবে ক্রাশ প্রোগ্রাম। আর সারা দেশে চলবে সাঁড়াশি অভিযান। ক্রাশ প্রোগ্রামের মধ্যে থাকবে মোবাইল কোর্টের অভিযান।’

দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার অনিবন্ধিত ভুয়া ক্লিনিক-হাসপাতাল। এসব অবৈধ ক্লিনিকে ভুয়া চিকিত্সক, অনভিজ্ঞ নার্স, অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিত্সা কার্যক্রম। ফলে অধিকাংশ হাসপাতালে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অঘটন। ভুল চিকিত্সার শিকার হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে প্রায়ই। অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকরা। এসব অবৈধ-নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময়ে অভিযান পরিচালিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন মানহীন এসব ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিত্সার নামে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমনকি ভুল চিকিত্সা ও ভুল রিপোর্টে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেককে। অনেক রোগীর জীবনও চলে যাচ্ছে ভুল চিকিত্সায়।

সারা দেশে বৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে প্রায় ১১ হাজার। অবৈধ আছে কত, তার সঠিক তথ্য নেই। অধিকাংশ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হওয়ার পর মালিকরা তারপর অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন। এই আবেদন দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে পড়ে থাকে।

কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আগে অনুমোদন নিতে হয়, অবকাঠামো তৈরি করতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম সরেজমিন গিয়ে দেখবে অনুমোদন দেওয়া যাবে কি না। এরপর অনুমোদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে চালু হওয়ার কথা। অনেকে অনুমোদন না নিয়ে ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে চিকিত্সার নামে বাণিজ্য শুরু করেছে। একই সঙ্গে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এসব অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে মা ও সন্তান মারা যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা, আটক ১ ঠাকুরগাঁওয়ে ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা, আটক ১
রাজধানীর আটটি সরকারি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভুল চিকিত্সার শিকার অনেক রোগী আসছেন। এদেরকে চিকিত্সা ও অপারেশন করেও তেমন কোনো সুফল আসে না বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। তাদের পরবর্তী জীবনটা প্যারালাইজড অবস্থার মতো বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় অনেকে শারীরিক ও মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছে। সঙ্গে তাদের পরিবারও আর্থিক ও মানসিকভাবে চরম দুরবস্থার শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব রোগী এই হাসপাতালে আসে, বেশির ভাগেরই সিজার অপারেশনে নানা ধরনের ত্রুটি থাকে। কোনো কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ বলেন, ৮০ থেকে ৮৫ ভাগেরই সিজারে ত্রুটি আছে। অনেক ক্লিনিক ও হাসপাতালে মানসম্পন্ন অপারেশন থিয়েটার নেই, অজ্ঞানকারী চিকিত্সক নেই। সেখানেও সিজারে হয়েছে বলে রোগীর অভিভাবকরা জানান।

এদিকে অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালনার সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন ও উপজেলা পর্যন্ত একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নির্ধারিত হারে মাসোহারা পেয়ে থাকেন। নিয়মিত মাসোহারা পাওয়ার কারণে এতসব ত্রুটি থাকার পরও অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে না।

পাঠকের মতামত: